আগের মতো নির্বাচন না চায়লে আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন : মজিবুর রহমান
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যারা ভোটাধিকার হরণ করেছে, গুলি করে মানুষ খুন করেছে, তাদের আগে বিচার করতে হবে। আগে বিচার, তারপর সংস্কার, তারপর নির্বাচন হতে হবে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সাতক্ষীরার আশাশুনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা ভোটের অধিকার পাইনি। বিগত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোট দিতে পারেনি। কেন্দ্রে গেলে তাদেরকে বলা হয়েছে, আপনাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, আপনারা চলে যান। হায়েনার দল গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল ৫ আগস্ট। এদিন থেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। সফল ছাত্র আন্দোলনে জালেমরা পালিয়ে গেছে। কিন্তু দেশে জুলুম এখনো বন্ধ হয়নি। দেশে আল্লাহর আইন চালু হলে জুলুম, নির্যাতন, হয়রানি বন্ধ হবে। দেশে ন্যায়বিচার কায়েম হবে।
তিনি আরও বলেন, জালেম সরকারের লোকজন এখনো বহু জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। এদেরকে সরাতে হবে। যারা নির্বাচনের জন্য তাড়াহুড়া করছেন তাদেরকে বলব, আপনারা কি আগের মতোই নির্বাচন চান? আগে সংস্কার, তারপর নির্বাচন।
মুজিবুর রহমান বলেন, ৭১ সাল থেকে গত ৫৩ বছর দেশ মানুষের আইন দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। মানুষের আইনে ভুল থাকতে পারে। কিন্তু আল্লাহর আইনে কোনো ভুল নেই।
তিনি কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে না, সমাজ পরিচালনা করে না, বিচার পরিচালনা করে না, আল্লাহ তাদেরকে বলেছেন- এরা হচ্ছে কাফের, এরা হচ্ছে ফাসেক, এরা হচ্ছে জালেম। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, এই দীর্ঘদিন যারা আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের আইন দিয়ে দেশ চালালো, আল্লাহর ভাষায় এক নম্বরে তাদেরকে কি বলবেন- কাফের, দুই নম্বরে কি বলেছেন তাদের পরিচয় ফাসেক এবং তিন নম্বরে কি বলেছেন জালেম। আগামী দিনে কেউ যদি আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের আইন দিয়ে দেশ পরিচালনা করে, তাদেরকেও আল্লাহ একই ভাষায় বলেছেন— তারা হবে কাফের, না হয় ফাসেক, না হয় জালেম।
তিনি আরও বলেন, মহানবী (সা.) সমাজের অন্যায়কে বন্ধ করার জন্য যুবক বয়সে একটি সংগঠন করেছিলেন। সেই দলটির নাম হিলফুল ফুজুল। আমরা তার উম্মত হিসেবে দল করা যাবে নাকি যাবে না? শুধু যাবেই নয়, দল না করলে মহানবীর একটি বড় সুন্নত লঙ্ঘন করা হলো।
সম্মেলনে উপজেলা জামায়াতের আমির আবু মুছা তারিকুজ্জামান তুষারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চলের পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও সাবেক জেলা আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা আমির উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির শেখ নুরুল হুদা, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মাহবুবুল আলম, প্রভাষক ওমর ফারুক, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবহান মুকুল, সাতক্ষীরা শহর আমির জাহিদুল ইসলাম, জেলা অফিস সেক্রেটারি রুহুল আমিন, চেয়ারম্যান আবু বক্কর, দেবহাটা উপজেলা আমির মাওলানা ওলিউল ইসলাম, কালিগঞ্জ উপজেলা আমির মাওলানা মোহাম্মদ আলী, ডা. নূরল মামিন, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাও. নূরুল আবছার মোর্তসজা, সেক্রেটারি মাওলানা আনওয়ারুল হক প্রমুখ।
এর আগে সকালে জামায়াতের মহিলা কর্মী সম্মেলনেও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।