আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে: আইসিএবি
করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো গেলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কিছুটা উপকার হত, বলে মনেকরেন সংগঠনের সভাপতি।
দেশের বিদ্যমান কর কাঠামো ও আদায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি মারিয়া হাওলাদার।
বুধবার রাজধানীতে সংগঠনের কাউন্সিল হলে সংবাদ সম্মেলনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের মূল লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকার চেয়ে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। বর্তমান কাঠামোর মধ্যে থেকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।
তবে কর কাঠামো ও কর আদায় প্রক্রিয়ায় আধুনিকরণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছা অসম্ভব কিছু নয়।”
সংসদ না থাকায় সোমবার টেলিভিশনে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার এ বাজেটে জিডিপির বিচারে ঘাটতিও ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে তিনি বলেন, বাজেটে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে আয়। যে কারণে নতুন অর্থবছরে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি করতে হবে।
তার মতে এটি অর্জন করা প্রায় দূরহ একটি বিষয় হবে।
সম্মেলনে ব্যক্তি করশ্রেণির জন্য আসছে অর্থবছরে আরও ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে থাকা সীমিত আয়ের মানুষের জন্য ‘খুব বেশি স্বস্তিদায়ক হবে না’ বলে মন্তব্য করেন আইসিবি সভাপতি।
“এই সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো গেলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কিছুটা উপকার হত,” যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, “কিছু পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি ছাড়া ‘নগদহীন কোম্পানির’ করের হার বৃদ্ধি করে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ২৫ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিৎ ছিল বলে আমরা মনে করি।”
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে যেগুলোর পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা ১০ শতাংশের কম শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, সেগুলোর জন্য চলতি অর্থবছরে করহার ছিল সাড়ে ২২ শতাংশ; শর্ত পরিপালন না করতে পারলে দিতে হত ২৫ শতাংশ হারে কর।
আসছে অর্থবছরে এ ধরনের তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কোনো শর্ত পরিপালনের সুযোগ না রেখেই তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির মত একেবারে সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট করহার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কিছু কোম্পানির ১০ শতাংশ আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তরেরও সুযোগ নাই; সেখানে এমন বিধান তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানিগুলো ‘বড় ধরনের একটা বৈষম্যের শিকার হয়ে যাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবির অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বর্তমান কাউন্সিল মেম্বাররাসহ বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।