রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থানীয় দরিদ্র কৃষক ও আদিবাসীদের দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে তাদের নামে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের নাম করে কোটি টাকার লেনদেন চালাচ্ছে।
উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ধান-চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে। তিনি সাধারণ ও দরিদ্র কৃষকদের মাত্র ৫০০ টাকার লোভ দেখিয়ে ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নিচ্ছেন।
আদিবাসী অনুকুল সরদার জানান, আতাউর তাকে কাকনহাট কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলান। এরপরেই তিনি বুঝতে পারেন, তার নামে গুদামে ধান সরবরাহ দেখিয়ে বড় ধরনের কারসাজি করা হচ্ছে।
অনুকুলের দাবি, তাঁদের এলাকার প্রায় ৩০-৪০ জনকে একইভাবে একাউন্ট খুলিয়ে চেক বইয়ের পাতায় আগেই স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, আতাউর রহমান ‘সাথী চালকল’-এর নামে ৩৬ মেট্রিক টন চাল উপজেলা খাদ্য গুদামে সরবরাহ করেছেন, যা তার মিলের উৎপাদন সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বাইরের নিম্নমানের চাল কিনে নিজের নামে সরবরাহ দেখিয়ে গুদামে জমা দেন।
এ বিষয়ে আতাউর রহমান নিজেই স্বীকার করেন, “সরকারি দামে লাভ কম হওয়ায় বাইরের এলাকা থেকে ধান কিনে গুদামে দিই। স্থানীয়দের একাউন্ট ব্যবহার করি, তাদের ৫০০ টাকা করে দিই।”
তিনি আরও বলেন, “খাদ্য গুদামের কর্মকর্তারা সব জানেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রণক শফিকুল ইসলাম ও ওসিএলএসডি নাজমুল আলমও জানেন, কিন্তু কিছু বলেন না।”
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, বিদায়ী খাদ্য নিয়ন্ত্রক শফিকুল ইসলাম, ওসিএলএসডি নাজমুল আলম, এক মাদক ব্যবসায়ী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে গঠিত একটি চক্র ধান-চাল কেনাবেচার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা প্রকৃত কৃষকদের পরিবর্তে নিজেরা নিম্নমানের ধান ও চাল গুদামে দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিদায়ী ও বর্তমান খাদ্য নিয়ন্ত্রক, গুদাম কর্মকর্তারা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ব্যাংক একাউন্ট খোলা ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, নতুন খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও ওসিএলএসডিকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।